Thursday, 23 April 2015

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সঙ্গীত শিল্পী গীতিকার ও সুরকার কবি বাতিলের আতঙ্ক

বাংলাদেশের একজন উজ্বল নক্ষত্র বাতিলের দুঃস্বপ্ন ছিলেন
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সঙ্গীত শিল্পী গীতিকার ও সুরকার কবি
"মাওলানা আইন উদ্দিন আল আজাদ (রাঃ)"








http://goo.gl/aAPJxp

মর্মান্তিকভাবে আকস্মিক সড়ক দুর্ঘটনায় গত ২০১০ সালের ১৮ই জুন, রোজ শুক্রবার নিহত হয়েছিলেন।
মরহুমের রূহের মাগফিরাত ও জান্নাতুল ফিরদাউস কামনা করে মহান রাববুল আলামীনের নিকট দোয়া করি।


ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট বলা হয় এই মহান ব্যাক্তি কে

নিচে একটি ইসলামী সঙ্গীত দিলাম


কি হবে  বেচে থেকে
=====<>===== 
কি হবে বেচে থেকে? অযথা বিদ্যা শিখে?
যদি না গড়তে পারি শোষণ বিহীন সমাজটাকে!
কি হবে ছাত্র সেজে চুমু খেয়ে সনদ খানা? যদি হয় বিদ্যালয়টা পতিতাদের আড্ডাখানা!
এর চেয়ে মরাই ভাল, দেশ ছেড়ে যাওয়াই ভাল,
কি হবে ধোকা দিয়ে বিবেকটাকে?
কি হবে আলেম হয়ে ইমাম সেজে সমাজেতে?
যদি না পারো সত্য কথা উচ্চসরে না বলিতে?
চাকরির ভয় কর যদি, ছেড়ে দাও ঐ না গতি, কি হবে ধোকা দিয়ে আল্লাহকে?
কি হবে যুবক নামে বোঝা হয়ে এ ধরাতে?
যেখানে মা বোনে ধর্ষিত হয় দিনে রাতে!
যৌবনের স্বার্থকতা, বুঝবে সকল ব্যাথা, যদি পার বলি দিতে মানুষ রুপি পশুটাকে!
কি হবে নেতা হয়ে জনবলে ঘাড় ফুলিয়ে?
রাজপথ গরম দেখে যদি থাক ঘরে শুয়ে!
এর চেয়ে সেজে গুজে, ভিলেনের সঠিক পোজে,
দিয়ে দাও অভিনয়ে জীবনটাকে!
কি হবে লেখালেখির কলমবাজির এই মহড়া?
সমাজের আসল চিত্র যদি না যাই তুলে ধরা! যদি ঐ ঘুষের বলে, কলমটা উল্টো চলে, তবে কি যাবে রুখা দূর্নীতিকে?
কি হবে নামাজ রোজা ইমানদারির বড়াই
করে?
যদি ঐ খোদার কুরআন নর্দামাতে থাকে পরে!
মসজিদের কোনে বসে, জিকির যতই কর কষে,
এভাবে যাইনা পাওয়া আল্লাহ্কে!
কি হবে পুরুষ হয়ে জন্ম নিয়ে এই দেশেতে?
যদি যাই ক্ষমতাটাকে ঘুরে ফিরে নারীর হাতে! কিবা জবাব দিবে? কিভাবে মুখ দেখাবে? আমাদের আগামী সেই প্রজন্মকে!
কি হবে কিতাবাদির তালিম দিয়ে মাদ্রাসাতে?
যদি সেই কুরান হাদিস নিষিদ্ধ হয় আদালতে! কাফনের কাপড় মাথায়, ময়দানে আয় ছুটে আয়, বিলিয়ে দেনা তোদের জীবনটাকে!

কথা, সুর ও কন্ঠঃ ইসলামী সংগীত সম্রাট আঈনুদ্দীন আল আজাদ 

একটি ওয়াজ দেখুন

Wednesday, 15 April 2015

লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস, ব্যাক পেইন, কোমড় ব্যাথা

লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস : কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ

বাতজনিত কারণেই কোমরে ব্যথা বেশি হয়ে থাকে। বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন ধরনের বাতব্যথা দেখা দেয়। তবে বয়স বাড়লে সাধারণত লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস নামক বাতজাতীয় রোগের জন্য কোমরে ব্যথা হয়ে থাকে। এখানে বার্ধক্যজনিত কোমরে ব্যথা নিয়ে আলোচনা করব।
মেরুদণ্ডের নিচের হাড়ের মধ্যবর্তী তরুণাস্থি বা ডিস্কের বার্ধক্যজনিত পরিবর্তনের ফলেই এ রোগের সূত্রপাত। তরুণাস্থির এই পরিবর্তনের সাথে সাথে মেরুদণ্ডের নিচের দিকে সংবেদনশীল পরিবর্তন সাধিত হয়। সাধারণত এ পরিবর্তন ৩০ বছর বয়স থেকে শুরু হয় এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে তা বাড়তে থাকে।

রোগের উপসর্গ
* কোমরে ব্যথা। প্রথম দিকে এ ব্যথা কম থাকে এবং ক্রমান্বয়ে তা বাড়তে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চিত হয়ে শুয়ে থাকলে এ ব্যথা কিছুটা কমে আসে।
* কোমরে সামান্য নাড়াচাড়া হলেই এ ব্যথা বেড়ে যায়।


* অনেক সময় ব্যথা পায়ের দিকে নামতে পারে এবং অবশ অবশ ভাব বা ঝিনঝিন অনুভূতিও হতে পারে। এ অবস্থাকে সায়াটিকা নামে অভিহিত করা হয়।
* কোমরের মাংসপেশি কামড়ানো ও শক্ত ভাব হয়ে যাওয়াÑ এ ধরনের উপসর্গও দেখা দিতে পারে।
* প্রাত্যহিক কাজ, যেমন তোলা পানিতে গোসল করা, হাঁটাহাঁটি করা, সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠা, নিচু হয়ে কোনো কাজ করা ইত্যাদি করলে কোমরের ব্যথা বেড়ে যায়।

এ রোগের চিকিৎসা
এ রোগী শক্ত ও সমান বিছানায় বিশ্রামে থাকবেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের বিশ্রামে ব্যথা উপশম হয়। গবেষণালব্ধ ফলাফলে দেখা গেছে যে, সাধারণ কোমরের ব্যথা তিন থেকে সাত দিন বিশ্রাম নিয়ে ভালো হয়ে যায়। বিশ্রামে না কমলে চিকিৎসা করাতে হবে। ব্যথা উপশমকারী ওষুধ এবং মাংসপেশি শিথিলকরণ ওষুধ স্বল্পমেয়াদে নেয়া যেতে পারে। তবে ব্যথা উপশমকারী ওষুধের পাশাপাশি রেনিটিডিন ও ওমিপ্রাজল ব্যবহার করা ভালো, তাতে রোগীর গ্যাসট্রিকের কোনো সমস্যা হয় না।

ফিজিক্যাল থেরাপি
ক) থার্মোথেরাপি : বিভিন্ন প্রকার তাপ এ রোগে চিকিৎসকগণ প্রয়োগ করে থাকেন; যেমন ডিট হিট বা সুপারফিসিয়াল হিট। রোগীর কোন অবস্থায় কোন ধরনের থেরাপি প্রয়োগ করতে হবে তা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ নির্ধারণ করে দেন।
খ) লাম্বার ট্রাকশন : লাম্বার ট্রাকশনে সাধারণত ২৫-৫০ পাউন্ড ওজন দেয়া হয়। তবে রোগীর অবস্থা, ওজন, বয়স ও পুরুষ-মহিলা ভেদে ওজন কম-বেশি হয়। লাম্বার ট্রাকশন বিশেষ সতর্কতার সাথে চিকিৎসকের (ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ) পরামর্শ অনুযায়ী দেয়া উচিত।
গ) লোকাল স্পাইনাল সাপোর্ট : এ রোগে লোকাল স্পাইনাল সাপোর্ট হিসেবে কোমরের বেল্ট বা করসেট ব্যবহার করা যায়। তবে করসেট শুধু চলাফেরা ও কাজের সময় ব্যবহার করা উচিত।
ঘ) ইলেকট্রোথেরাপি : ইলেকট্রোথেরাপি হিসেবে ট্রান্সকিউটেনাস ইলেকট্রিকাল নার্ভ স্টিমুলেশন কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে রোগীর অবস্থাভেদে চিকিৎসকগণ এসব চিকিৎসা প্রয়োগের উপদেশ দিয়ে থাকেন।
ঙ) থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ : কোমরের ব্যথায় বিভিন্ন প্রকার থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ দেয়া হয়ে থাকে। ব্যায়াম রোগীর মাংসপেশিকে সবল করে এবং বেশি চাপ সহ্য করার ক্ষমতা তৈরি করে।

কোমরের বাতজনিত ব্যথার রোগীর জন্য কিছু পরামর্শ
* চেয়ারে বসার সময় ঘাড় ও পিঠ সোজা রেখে বসবেন।
* সব সময় শক্ত (একটি পাতলা তোশক) সমান বিছানায় ঘুমাবেন।
* কাজ করার সময় করসেট ব্যবহার করুন।
* কোনো জিনিস তোলার সময় সোজা হয়ে বসে তুলবেন।
* ফোমের বিছানায় ঘুমাবেন না এবং ফোমের (নরম সোফা) সোফায় অনেকক্ষণ বসবেন না।
* একই স্থানে বেশি সময় দাঁড়িয়ে অথবা বসে থাকবেন না।
* ঝুঁকে বা মেরুদণ্ড বাঁকা করে কোনো কাজ করবেন না।
* ভারী কোনো জিনিস, যেমন বেশি ওজনের থলি, পানিভর্তি বালতি ইত্যাদি বহন করবেন না।
* পিঁড়িতে বসে কোনো কাজ, যেমন মাছ কাটা, শাকসবজি কাটা ইত্যাদি করবেন না।
* টিউবওয়েল চেপে পানি ওঠাবেন না।
* ঝরনায় অথবা সোজা হয়ে বসে তোলা পানি দিয়ে গোসল করবেন।
* চেয়ার-টেবিলে বসে ভাত খাবেন।
* সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় মেরুদণ্ড সোজা রেখে ধীরে ধীরে উঠবেন ও নামবেন।
* হাইহিল জুতা ব্যবহার পরিহার করুন।
* মোটা ব্যক্তিরা শরীরের ওজন কমাবেন।
* যানবাহনে চড়ার সময় সামনের আসনে বসবেন।
* বিছানা থেকে ওঠার সময় যেকোনো এক দিকে কাত হয়ে উঠবেন।
* কোনো প্রকার মালিশ করবেন না।

বেশি পুরনো হলে যেমন কোনো যন্ত্র প্রায় কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, তেমনি মানুষের বয়স বাড়লেও সে অনেকাংশে তার আগের কর্মক্ষমতাকে ধরে রাখতে পারে না। তবে সুস্থ অবস্থায় এ নিয়মগুলো মেনে চললে কোমর ব্যথায় সহজে মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে না, বরং কর্মক্ষমতাও অনেক ক্ষেত্রে অটুট থাকে। তাই সুস্থ সবারই উচিত এগুলো মেনে চলা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা।


নিচের ছবিগুলো কে ফলো করলেই অনেকটা সুস্থ থাকতে পারেন-





























Tuesday, 14 April 2015

সাধ্বী দেবা, মহাঋষি মহেশ যোগী, শ্রী শ্রী রবি শংকর, ইচ্ছাধারি বাবা ভীমানান্দ, স্বামী নিত্যানন্দ ইত্যাদি ঠাকুরগুরুদের যৌন কেলেঙ্কারী।

ইন্ডিয়াতে আধ্যাত্মিক গুরুদের কমতি নেই বললেই চলে। তাদের বিভিন্ন ধর্ম বিরোধী কার্যকলাপ সকলেরই কম-বেশি জানা রয়েছে। তাদের কেউ কেউ স্বর্গে যাবার অগ্রিম টিকেট দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তাদের মধ্যে অনেকেই বিপরীত লিঙ্গের সাথে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় পাওয়া গেছে। বিভিন্ন ধরণের অদ্ভুদ কেলেঙ্কারিতে তারা লিপ্ত। গতকাল তাদের মধ্যে একজন অন্য ধর্ম বিষয়ক মন্তব্য করে সমালোচনার সৃষ্টি করেছেন।

সাধ্বী দেবা ঠাকুরঃ
 মুসলিম ও খ্রিস্টানদের জোর করেই নির্বিজকরণ করিয়ে দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের সূত্রপাত করলেন ভারতের হিন্দু মহাসভার অন্যতম শীর্ষ নেত্রী সাধ্বী দেবা ঠাকুর। শনিবার এক জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেছেন, 
“মুসলিম ও খ্রিস্টানদের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। একে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রকে জরুরি অবস্থা জারি করতে হবে। সেখানে সব মুসলিম ও খ্রিস্টানদের জোর করে নির্বিজকরণ করাতে হবে, যাতে তারা সংখ্যা বৃদ্ধি না করতে পারে”।
 সাধ্বী জানান, 
"হিন্দুদের উচিত অধিক সন্তানের জন্ম দিয়ে সম্প্রদায়ের সংখ্যা বৃদ্ধিতে জোর দেয়া, যাতে সারা বিশ্বে এর প্রভাব পড়ে"। 
এখানেই শেষ নয়। সাধ্বী এর পাশাপাশি আরও একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেন। 
তিনি জানান, 
"হিন্দু দেব-দেবীদের মূর্তি মসজিদ ও গির্জায় বসাতে হবে"।
 পাশাপাশি, নাথুরাম গডসেকে ‘দেশপ্রেমী’ বলে উল্লেখ করে হরিয়ানায় তাঁর মূর্তি বসানোর জোর সওয়াল করেন তিনি।



মহাঋষি মহেশ যোগী:
মহেশ যোগী ১৯৬৮ সালে “দ্যা বিটলস আধ্যাত্মিক পরামর্শদাতা” হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। দ্যা বিটলস এর জন লেনন তাদের ভারত সফরের সময় একটি গান প্রচার করেন, গানটির নাম “সেক্সি স্যাডি” ছিল। তারা এর নাম “মহর্ষি” রাখতে চেয়েছিলেন। তখন থেকেই মহেশ যোগীর কলঙ্কের অধ্যায় জানা যায়। তারা ইন্ডিয়া থেকে যাবার সময় গানটি লিখেছিলেন। তারা মহর্ষি এর কুকর্মের কথা জানতে পারেন। তিনি চিকিৎসার নামে মহিলাদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক করত। তারপরই তারা ইন্ডিয়া ত্যাগ করেন। মহর্ষি তাদের ইন্ডিয়া ত্যাগ করার কারন জানতে চাইলে তারা বলেন, 
“আপনি তো মহাজাগতিক। মনের সব কথা বুঝতে পারেন। তাহলে আমাদের মনের কথা জেনে নিন”।

কয়দিন আগে আবার নতুন করে সে বিতর্কে জড়িয়ে যায়।
ঈশ্বরের কাছাকাছি পৌঁছানো যাবে এমন আশায় ৪০০জন পুরুষকে শুক্রাশয় কেটে ফেলতে প্ররোচিত করেন রাম রহিম সিং।
সিডনি মর্নিং হেরাল্ডে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে, আজ থেকে ১৫ বছর আগে, ২০০০ সালে এ ঘটনাটি ঘটলেও এতদিন পর্যন্ত ওই ৪০০জন পুরুষের মধ্যে কেউই এ ব্যাপারে মুখ খোলেনি। যে কারণে বিষয়টি চাপা পড়েছিল। ১৫ বছরে প্রথমবার এই ব্যাপারে মুখ খুলেছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই।
এছাড়াও, ২০০২ সালে এক তদন্তকারী সাংবাদিকের হত্যায় যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে রাম রহিম সিংয়ের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মহিলা ভক্ত যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুললেও কখনই গ্রেপ্তার হননি রাম রহিম।
প্রায় ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সম্পত্তির মালিক গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের ভক্তের সংখ্যা ৫ কোটি ছাড়িয়েছে। দেরা সচা সৌদার প্রতিষ্ঠাতা রাম রহিম এখন অভিনয় করেছেন ছবিতেও।


শ্রী শ্রী রবি শংকর
গত ডিসেম্বর ভারতের সুপ্রিম কোর্টের homosxuality decriminalizing 2009 ল্যান্ডমার্ক ফয়সালা সংস্করন করা হলে, আধ্যাত্মিক স্বামী রবি শংকর টুইটার লিখেছিলেন - " সমকামিতা হিন্দু সংস্কৃতিতে একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। আসলে, প্রভু Ayyappa(বিষ্ণু ও শিব ) হরি – হারা হিসেবেই জন্মগ্রহণ করেন "।
পরে তিনি টুইট করেছেন - 
" সমকামীতা, কোনো অপরাধের মধ্যে পরে না। সবার মাঝেই পুরুষ এবং মহিলার উপাদান আছে। তাদের কর্তৃত্ব মতে, প্রবণতা এবং পরিবর্তনও হতে পারে "।
 অন্য পোস্টে শ্রী শ্রী লিখেছেন -
"কাউকে তার যৌন বৈষম্য এর জন্য মুখোমুখি করা উচিত নয়। এই কিম্ভুতকিমাকার জন্য কাউকে অপরাধী হিসেবে ব্র্যান্ডেড করা ঠিক হবে না "।


ইচ্ছাধারি বাবা ভীমানান্দ:
২০১০ সালে তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু পাচারের অভিযোগ গঠন করা হয়। তিনি দিল্লিতে বিমানবালা, শিক্ষার্থী ও বিবাহিত নারীদের ২,৫০,০০০ টাকায় বিক্রয় করে দিত। তার অনেক বড় সংগঠন ছিল এ নিয়ে। এই ইচ্ছাধারি বাবা এসকল কাজ করে প্রায় ২৫,০০০ কোটি টাকা আয় করেন।
ইন্ডিয়াতে এসকল কার্যকলাপ অনেক প্রথম থেকেই চলে আসছে। তবু এদের জন্য পর্যাপ্ত কোন ব্যবস্থা নেই। এখনও প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন তর্কের সৃষ্টি করছেন, তাদের মধ্যেই বিভিন্ন সাধবি বাবা, যোগী, মহারিসি ইত্যাদি আধ্যাত্মিক গুরুগণ।–সূত্র: ওয়ান্ডার। 


গুরুদের আরো  কেলেঙ্কারী দেখুন http://www.satkahan.com/feature/curious-scandals-of-Indian-swamis?print=1

সাইয়েদ কুতুব শহীদ (রহ.) এর জীবনী -(দুর্লভ ভিডিও সহ)

বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম প্রাণপুরুষ সাইয়েদ কুতুব শহীদ (রহ.)। সাইয়েদ কুতুব ১৯০৬ সালে মিসরের উস্ইউত জেলার মুশা গ্রামে কুতুব বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হাজী ইব্রাহীম কুতুব, মায়ের নাম ফাতিমা হোসাইন ওসমান। মা যেমন ছিলেন অত্যন্ত খোদাভীরু ও দ্বীনদার তেমনি তাঁর বাবাও ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ও সচ্চরিত্রবান। বাবা মায়ের পাঁচ সন্তান-সন্ততির মধ্যে সাইয়েদ কুতুব ছিলেন সবার বড়। সকল ভাইবোনই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে ইসলামী জীবন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শরীক হয়ে কঠোর ঈমানী পরীক্ষার মুখোমুখি হয়ে গোটা বিশ্বের ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রেরণার উৎস হয়ে রইলেন।

সাইয়েদ কুতুবের শিক্ষাজীবন শুরু হয় গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শৈশবেই তিনি কুরআন শরীফ হেফজ করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষে তিনি কায়রোর তাজহিয়াতু দারুল উলুম মাদরাসায় ভর্তি হন। ১৯২৯ সালে ঐ মাদরাসার শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি কায়রোর বিখ্যাত মাদরাসা দারুল উলুমে ভর্তি হন। তিনি ঐ মাদরাসা থেকে ১৯৩৩ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ঐ মাদরাসায়ই অধ্যাপক নিযুক্ত হন।
কিছুদিন অধ্যাপনা শেষে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্কুল ইন্সপেক্টর নিযুক্ত হন। আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতির ওপরে অধিক জ্ঞানার্জনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেরণ করে। সেখানে দু'বছরের কোর্স সমাপ্ত করে তিনি দেশে ফিরে আসেন। সেখানে থাকাকালে তিনি বস্তুবাদী সমাজের সাথে পরিচিতি লাভ করেন। বস্তুবাদী সমাজের অবস্থা দেখে তার এ প্রত্যয় জন্মে যে, একমাত্র ইসলামী সমাজব্যবস্থাই মানব সমাজকে কল্যাণের পথে নিয়ে যেতে পারে।
আমেরিকা থেকে দেশে ফেরার পরই তিনি ইখওয়ানুল মুসলেমুন দলের আদর্শ, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি গভীরভাবে যাঁচাই করতে শুরু করেন। তিনি ইখওয়ানের আদর্শ ও উদ্দেশ্যের সাথে একমত হয়ে ১৯৫৩ সালে ঐ দলের সদস্য হন এবং দলের তথ্য ও প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি নির্বাচিত হন।
১৯৪৮ সালের ৮ ডিসেম্বর নাকরাশী পাশা ইখওয়ানকে অবৈধ ঘোষণা করেন। নিষিদ্ধ হওয়ার পর এ দলের হাজার হাজার কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৪৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যাবেলা ইখওয়ানুল মুসলেমুন দলের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বাস ও আত্মপ্রত্যয়ের পাহাড় ঈমানের পথে আহবানকারী উস্তাদ হাসানুল বান্নাকে শুববানুল মুসলেমুন-এর কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে প্রকাশে শহীদ করা হয়। ১৯৫২ সালের জুলাই মাসে মিসরে এক সামরিক বিপ্লব ঘটে এবং ঐ বছরই ইখওয়ান পুনরায় বহাল হয়ে যায় এবং ইখওয়ানুল হোদাইবী দলের মোর্শেমে আম নির্বাচিত হন। সাইয়েদ কুতুব দলের কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য মনোনীত হন এবং দলের আদর্শ প্রচার ও আন্দোলনের সম্প্রসারণ তার পরিচালনাধীনে অগ্রসর হতে থাকে। ১৯৫৪ সালে সাইয়েদ কুতুবকে ইখওয়ান পরিচালিত সাময়িকী-ইখওয়ানুল মুসলেমুন-এর সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। তার সম্পাদনা দায়িত্ব গ্রহণের ছয় মাস পরেই কর্নেল নাসের সরকার পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়। কারণ ঐ বছর মিসর সরকার বৃটিশের সঙ্গে নতুন করে যে চুক্তি সম্পাদন করেন ঐ পত্রিকা তার কঠোর সমালোচনা করে। পত্রিকা বন্ধ করে দেয়ার পর নাসের সরকার ইখওয়ান কর্মীদের উপর কঠোর নির্যাতন শুরু করে এবং এক বানোয়াট হত্যা-ষড়যন্ত্র মামলার অভিযোগ এনে দলটিকে বেআইনি ঘোষণা করা হয় এবং দলের নেতাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার করা হয় সাইয়েদ কুতুবকেও। হাজার হাজার লোককে জেলে ঠেলে দেয়া হয় এবং তাদের উপর জুলুম-নির্যাতনের এমন চরম স্টিম রোলার চালান হয়, যা দেখে মানব ইতিহাসের কালো অধ্যায়ও কেঁপে ওঠে। অবশেষে ছয়জন নেতার মৃত্যুদন্ড দেয়ার মাধ্যমে এই নির্মম ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটে।
গ্রেফতারের সময় সাইয়েদ কুতুব ভীষণভাবে জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। সামরিক অফিসার তাকে ঐ অবস্থায় গ্রেফতার করে এবং হাতে পায়ে শিকল পরিয়ে দেয়। এ অবস্থায় তাঁকে কোন গাড়িতে না চড়িয়ে জেল পর্যন্ত হেঁটে যেতে বাধ্য করা হয়। অত্যধিক অসুস্থতার কারণে চলতে গিয়ে তিনি বার বার বেহুশ হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফিরে এলে তিনি উচ্চারণ করতেন : আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ। জেলে প্রবেশ করার সাথে সাথে হিংস্র জেল কর্মচারীরা তাকে নির্মমভাবে মারপিট করতে থাকে এবং দুঘণ্টা ধরে এ অত্যাচার চলতে থাকে। এতেই শেষ নয়, বর্বর জালেমরা তাঁর ওপর একটি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কুকুর লেলিয়ে দেয়। কুকুরটি তাঁর পা কামড়ে ধরে জেলের আঙ্গিনায় টেনে নিয়ে বেড়াতে থাকে। এর পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় একটি নির্জন কক্ষে। সেখানে তাকে একটানা সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রক্তাক্ত বেদনায় জর্জরিত শরীর এসব শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করার মতো ছিল না। কিন্তু ঈমানের বলে বলীয়ান পাহাড়ের মতো অবিচল মর্দে মুজাহিদ এসব অমানুষিক অত্যাচার অকাতরে সহ্য করেন। এ অবস্থায় তাঁর মুখে উচ্চারিত হতে থাকত আল্লাহ আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
কয়েকখানার এক সাথী সাইয়েদের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন, হাসপাতালের নিকট দিয়ে তিনি ধীর কদমে এগুচ্ছিলেন। তাঁর প্রশস্ত কপাল থেকে অন্তরের স্বস্তি স্পষ্ট ঝিলিক মারছিল। চোখের চমক থেকে ঝরে পড়ছিল নূরের ধারা। তিনি এমনভাবে টেনে টেনে মাটির উপর পা ফেলেছিলেন, যেন তা শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল। পায়ের অস্বাভাবিক ফুলা জল্লাদের নিষ্ঠুরতার জন্য যেন আর্তনাদ করছিল।
তাঁর ওপরে চালানো বিভীষিকাময় নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ইউসুফ আল আযম লিখেছেন, ‘‘সাইয়েদ কুতুবের ওপর বর্ণনাতীত নির্যাতন চালানো হয়। আগুন দ্বারা সারা শরীর ঝলসে দেয়া হয় পুলিশের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর লেলিয়ে দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থান রক্তাক্ত করা হয়। মাথার ওপর কখনো টগবগে গরম পানি ঢালা হতো। পরক্ষণে আবার খুবই শীতল পানি ঢেলে শরীর বরফের মতো ঠান্ডা করা হতো। পুলিশ লাথি, ঘুষি মেরে একদিক থেকে অন্য দিকে নিয়ে যেত।’’
এভাবে নির্মম নির্যাতনের ফলে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৯৫৫ সালের ২ মে তাকে সামরিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঐ বছরের ১৩ জুলাই মহকুমাতুস সাব অর্থাৎ জাতীয় আদালতে তাকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করে। পরে এ দন্ড বাতিল করে তাঁকে ১৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়। এক বছর কারাভোগের পর সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়া হয় যে, তিনি যদি সংবাদপত্রের মাধ্যমে ক্ষমার আবেদন করেন, তাহলে তাঁকে মুক্তি দেয়া যেতে পারে। এ প্রস্তাবের জওয়াবে মর্দেমুনি বলেন, ‘‘আমি এ প্রস্তাব শুনে অত্যন্ত আশ্চার্যান্বিত হচ্ছি যে, জমলুমকে জালিমের নিকট ক্ষমার আবেদন জানাতে বলা হচ্ছে। খোদার কসম। যদি ক্ষমা প্রার্থনার কয়েকটি শব্দ আমাকে ফাঁসি থেকেও রেহাই দিতে পারে, তবুও আমি এরূপ শব্দ উচ্চারণ করতে রাজি নই। আমি আল্লাহর দরবারে এমন অবস্থায় হাজির হতে চাই যে, আমি তাঁর প্রতি এবং তিনি আমার প্রতি সন্তুষ্ট।
পরবর্তীকালে যতবারই তাঁকে ক্ষমা প্রার্থনার পরামর্শ দেয়া হয়েছে, ততবারই তিনি এই বলে জওয়াব দিয়েছেন, ‘‘যদি আমাকে যথার্থই অপরাধের জন্য কারারুদ্ধ করা হয়ে থাকে, তাহলে আমি এতে সন্তুষ্ট আছি। আর যদি বাতিল শক্তি আমাকে অন্যায়ভাবে বন্দী করে থাকে, তাহলে আমি কিছুতেই বাতিলের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবো না।’’
এর পরে সরকার পক্ষ থেকে প্রলোভন দেখানো হলো যে, যদি তিনি সম্মত হন তাহলে তাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান করা হবে। সাইয়েদ এ প্রস্তাবের জওয়াবে বললেন, ‘‘আমি দুঃখিত। মন্ত্রিত্ব গ্রহণ আমার পক্ষে সে সময় পর্যন্ত সম্ভব নয়, যতক্ষণ না পর্যন্ত মিসরের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে ইসলামী ছাঁচে ঢেরে সাজাবার এখতিয়ার দেয়া না হবে।’’
জেলখানায় তাঁর ওপরে চালানো হয় জাহেলী যুগের চেয়েও কঠিন নির্যাতন। এমনও হয়েছে যে, একাধারে চার দিন তাকে একই চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়েছে, কোন খাবার-পানীয় দেয়া হয়নি। তাঁর সামনেই অন্যরা উল্লাস করে পানি পান করতো অথচ তাঁকে এক গ্লাস পানিও দেওয়া হতো না। হায়রে নিষ্ঠুরতা।

সাইয়েদ কুতুব ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তাররা কারাগারে ছিলেন। ১৯৬৪ সালে ইরাকের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট আবদুস সালাম আরিফ কায়রো সফর করেন। ইরাকী আলেমদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইরাকী প্রেসিডেন্ট জামাল নাসেরের সাথে বৈঠককালে সাইয়েদ কুতুবকে মুক্তি প্রদানের অনুরোধ জানান। তাঁর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সাইয়েদ কুতুবকে মুক্তি প্রদান করা হয়। কর্নেল নাসের তাকে মুক্তি দিয়ে অত্যন্ত কড়া নজরদারিতে তারই বাসভবনে অন্তরীণাবদ্ধ করেন। সাইয়েদ কুতুবকে জেল থেকে মুক্তি দেয়ার কারণে মিসরের কমিউনিস্ট গোষ্ঠী এবং তাদের মুরববীরা নাখোশ হয়। শুরু হয় কর্নেল নাসেরের ওপর নানা চাপ। কমিউনিস্ট পার্টি জামাল নাসেরের সহযোগিতার জন্য একটি শর্ত আরোপ করে। তা হচ্ছে মিসর থেকে ইখওয়ানকে নির্মূল করতে হবে। ১৯৬৫ সালে ইসরাইলের মুরববী রাশিয়া থেকে নাসেরকে তলব করা হয়। পাশ্চাত্যের সেবাদাস নাসের ছুটে যায় প্রভুর ডাকে। ২৭ আগস্ট মস্কোয় আরব ছাত্রদের এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা প্রসঙ্গে জামাল নাসের ঘোষণা করেন যে, মিসরের ইখওয়ানুল মুসলেমুন তাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। অতীতে বহুবার সে ইখওয়ানকে ক্ষমা করেছে এবার আর ক্ষমা করা হবে না। মস্কো থেকে নাসের দেশে ফিরে এলেই শুরু হয় ব্যাপক ধরপাকড়। গ্রেফতার করা হয় হাজার হাজার ইখওয়ান কর্মীকে। পুনরায় গ্রেফতার করা হলো সাইয়েদ কুতুবকে। এবার গ্রেফতারী পরওয়ানা দেখে নিজেই নিজের ভবিষ্যত সম্পর্কে মন্তব্য করেন যে, আমি জানি জালেমরা এবার আমার মাথাই চায়। তাতে আমার কোন দুঃখ নেই। নিজের মৃত্যুর জন্য আমার কোন আক্ষেপ নেই। আমারতো বরং সৌভাগ্য যে আল্লাহর রাস্তায় আমার জীবনের সমাপ্তি হতে যাচ্ছে। আগামীকালের ইতিহাস প্রমাণ করবে যে, ইখওয়ানুল মুসলেমুন সঠিক পথের অনুসারী ছিল, নাকি এই জালেম শাসকগোষ্ঠীই সঠিক পথে ছিল। শুধু তাকেই নয় তার ভাই মুহম্মদ কুতুব, ভগ্নি হামিদা কুতুব ও আমিনা কুতুবসহ বিশ হাজারেরও বেশিসংখ্যক লোককে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। এদের মধ্যে প্রায় সাতশ' ছিলেন মহিলা।
ইখওয়ানের প্রতি যেসব অভিযোগ আরোপ করা হয় তার প্রথমটি ছিল, ইখওয়ান একটি গোপন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিল- যার নেতা ছিলেন সাইয়েদ কুতুব। সংগঠনটি অভিযুক্তদের জন্য আর্থিক সাহায্য এবং অন্যান্য উপকরণ সংগ্রহ করতো। এরা প্রেসিডেন্ট নাসেরের হত্যা পরিকল্পনা, বিশেষ ট্রেনগুলোর ধ্বংসের প্রশিক্ষণ দিত এবং এ প্রশিক্ষণ কাজে কতিপয় মহিলারও সহযোগিতা নিয়েছিল। সরকারি প্রেসনোটে বলা হয়েছে শুধুমাত্র এ কারণেই কি এ অভিযোগ সমর্থন করা যেতে পারে? সাধারণ বুদ্ধির একজন লোকও প্রশ্ন করবে যে, ১৯৫৪ সালে হাজার হাজার কর্মীকে জেলে বন্দী করা হয়েছে। তাদের পরিবারবর্গ সীমাহীন দুর্দশা এবং নিঃস্ব অবস্থায় জীবন কাটিয়েছে। স্বয়ং সাইয়েদ কুতুবকে দশ বছর পর মুক্তি দেয়া হয় এবং এক বছর যেতে না যেতেই তাকে দ্বিতীয়বার গ্রেফতার করা হয়। মুক্তির পরও তাকে কড়া নজরে রাখা হয়। অথচ এটা কি করে বিবেক সায় দেবে যে, তিনি এত কম সময়ের মধ্যে এত বড় ষড়যন্ত্র কিভাবে তৈরি করলেন এবং এ জন্য এত বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করলেন যা সরকারের গদি ওলট-পালট করে দেবে। প্রকৃতপক্ষে এসব ছিল ইখওয়ান নির্মূলের বানোয়াট বাহানামাত্র।
দ্বিতীয় অভিযোগ আনা হয় ‘মায়ালেম ফিততরীক' পুস্তক লেখার জন্য। মিসরে সামরিক বাহিনীর একটি পত্রিকায় ১.১০.১৯৬৫ তারিখে প্রকাশিত ৪৪৬নং সংখ্যায় তার বিরুদ্ধে অতীতের অভিযোগের যে বিবরণ প্রকাশিত হয় তার সারমর্ম নিম্নরূপ। ‘‘লেখক পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সমাজ এবং মার্কসীয় মতবাদ উভয়েরই তীব্র বিরোধীতা করেছেন। তিনি দাবি করেন যে ঐসব মতবাদের মধ্যে মানবজাতির জন্য কিছুই নাই। তার মতে বতর্মান দুনিয়া জাহেলিয়াতে ডুবে গেছে। আল্লাহর সার্বভৌমত্বের জায়গায় অন্যায়ভাবে মানুষের সার্বভৌমত্ব কায়েম হয়ে গেছে। লেখক কোরআনের দৃষ্টিভঙ্গীকে পুনরুজ্জীবিত করে ঐ জাহেলিয়াতকে উচ্ছেদ করার উপর জোর দেন এবং এ জন্য নিজেদের যথাসর্বস্ব কোরবানী করে দেয়ার আহবান জানান।
তিনি আল্লাহ ব্যতীত সকল শাসনকর্তাদের তাগুত আখ্যা দেন। লেখক বলেন- তাগুতের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য ঈমানের শর্ত। তিনি ভাষা, গাত্রবর্ণ, বংশ, অঞ্চল ইত্যাদির ভিত্তিতে ঐক্যবোধকে ভ্রান্ত আখ্যা দিয়ে ইসলামী আকীদার ভিত্তিতে ঐক্য গড়া এবং ঐ মতবাদের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম করার জন্য মুসলিমদের উস্কানী দিচ্ছেন।
লেখক তার ঐ পুস্তকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদ করা ও সমগ্র মিসরে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু করা ও প্রতিটি সরকারকে উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা পেশ করেন।’’
ইখওয়ানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছিল তা ছিল বাহানামাত্র। আসল ‘ব্যাপারটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইখওয়ান নেতা ও কর্মীরা ১৯৫৪ সালের শেষভাগ থেকে জেলখানায় বন্দী জীবনযাপন করেন। রাজনৈতিক তৎপরতার কোনো চিন্তা-কল্পনা করাও তাদের অসম্ভব ছিল। তবু তাদের জ্ঞানী ব্যক্তিরা জেলখানায় অথবা জেলের বাইরে জ্ঞানগত ও চিন্তাধারার দিক থেকে দেশের অভ্যন্তরে ইসলামকে রক্ষার যতটুকু খিদমত করা সম্ভব ছিল তা তারা করেছেন। ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে তারা সাহিত্য রচনা করেছেন। মিসরে তাফসীর, হাদীস, ফিকহ, ইসলামী ইতিহাস এবং ইসলামী জীবন ব্যবস্থার ওপর বিপুল সাহিত্য বিগত দশ বছরে রচিত হয় এবং তা বিভিন্ন বিষয়ে এত বেশি ছিল যে, লোকেরা লেখকদেরকে সাহস উদ্যম প্রদান এবং প্রকাশকদেরকে প্রশংসা না জানিয়ে পারেনি।
ইখওয়ান নেতা-কর্মীদের বিচার শুরু হলো বিশেষ সামরিক আদালতে। ‘প্রথমত ঘোষণা করা হয় যে, টেলিভিশনে ঐ বিচারানুষ্ঠানের দৃশ্য প্রচার করা হবে। কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তিগণ ‘অপরাধ স্বীকার' করতে অস্বীকার এবং তাদের প্রতি দৈহিক নির্যাতনের বিবরণ প্রকাশ করায় টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপর রুদ্ধ দ্বারকক্ষে বিচার চলতে থাকে। আসামীদের পক্ষে কোন উকিল ছিল না। অন্য দেশ থেকে আইনজীবীগণ আসামী পক্ষ সমর্থনের আবেদন করেন। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। ফরাসী বার এসোসিয়েশনের ভূতপূর্ব সভাপতি উইলিয়ম থরপ ও মরক্কোর দু'জন আইনজীবী আসামী পক্ষ সমর্থনের জন্য রীতিমতো আবেদন করেন। কিন্তু তা নামঞ্জুর করা হয়। সুদানের দু'জন আইনজীবী কায়রো পৌঁছে তথাকার বার এসোসিয়েশনে নাম রেজিস্ট্রি করে আদালতে হাজির হন। পুলিশ তাদের আদালত থেকে ধাক্কা মেরে বের করে দেয় এবং মিসর ত্যাগ করতে বাধ্য করে। সাইয়েদ কুতুব ও অন্যান্য আসামীগণ ঊনিশ শ'ছেষট্টি সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বিচার করাকালে ট্রাইব্যুনালের সামনে প্রকাশ করেন যে, ‘অপরাধ স্বীকার' করার জন্য তাদের প্রতি অমানুষিক দৈহিক নির্যাতন চালানো হয়। ট্রাইব্যুনালের সভাপতি আসামীদের কোন কথার প্রতিই কর্ণপাত করেন নাই।’’ এমনিভাবে ১৯ মে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত আদালতে বিচার প্রহসন নাটক মঞ্চস্থ হয়।
ট্রাইব্যুনালের বিচারক জামাল নাসেরের সাথে দীর্ঘ আলোচনা করে ১৯৬৬ সালের ২১ আগস্ট রায় ঘোষণা করেন। অভিযুক্ত ৪৩ জন নেতাকর্মীর মধ্যে সাতজনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। এরা হচ্ছেন সাইয়েদ কুতুব, মুহাম্মদ ইউসুফ, আব্দুল ফাত্তাহ ইসমাঈল, শবরী আরাফাহ, আহমদ আবদুল মজিদ, আব্দুল আজিজ ও আলী উসমাভী।
সাইয়েদ কতুবের মৃত্যুদন্ডাদেশ শোনার পর আদালত সংশ্লিষ্ট লোকজন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। অথচ সাইয়েদ রায় শোনার পর খুশি মনে বলে উঠলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ'। তিনি হাসতে হাসতে বললেন ‘‘আমার কাছে এটা কোন বিষয় নয় যে, আমি কোথায় মরতে যাচ্ছি এবং কিভাবে যালিমরা আমার মৃত্যুদন্ড দেবে। আমিতো এতেই সন্তুষ্ট যে, আমি আল্লাহর একজন অনুগত বান্দা হিসাবে শাহাদতের পেয়ালা পান করতে যাচ্ছি।’’
এর পরের দৃশ্য বড়ই করুণ। জয়নাব আল গাযালী লিখেছেন, মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয়ার পাঁচ দিন পর সাইয়েদ কুতুব কারাগারে আটক ছোট বোন হামিদা কুতুবকে দেখতে তার কক্ষে যান। ছোট বোন তাকে দেখে বলেন, ‘‘ধন্যবাদ, প্রিয় ভাই সাইয়েদ। এটা আমার জন্য এক দূর্লভ মুহূর্ত। আপনি আমার পাশে একটু বসুন।’’
সাইয়েদ পাশে বসলেন। বিভিন্ন বিষয়ে অনেক আলোচনা হলো। তিনি সবাইকে ধৈর্য ধারণের নির্দেশ দিলেন। হামিদা কুতুব মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ভাইকে দেখে বিষণ্ণ হয়ে পড়েন। কিন্তু সাইয়েদ কুতুবের সাথে কিছু কথা বলার পর হামিদা কুতুবের বিষন্ন বদনেও হাসির রেখা ফুটে উঠলো।
২৮ আগস্ট রাতে সাইয়েদ কুতুব ও তার দুই সাথীকে ফাঁসীর সেলে নিয়ে যাওয়া হলো। ২৯ আগস্ট ভোর রাত। সাইয়েদ কুতুব ও তার দুই সঙ্গীকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। ইতোমধ্যে ফাঁসির সকল আয়োজন শেষ। সাইয়েদ অত্যন্ত আনন্দিত। নির্ভীক।
চিত্তে সামনে পা বাড়াচ্ছেন, তার মুখে তৃপ্তির হাসি। ছোবহে সাদেকের আলো ঝলমল ধরণী যেন আজ গভীর বেদনাপ্লুত। সাইয়েদ কুতুব হাসতে হাসতে ফাঁসির মঞ্চে উঠলেন। চারদিকে ভেসে উঠল ফজরের আযান। এমনি এক পবিত্র পরিবেশে কার্যকর করা হলো ইতিহাসের ঘৃণ্যতম আয়োজন, সাইয়েদ কুতুব ও তার সঙ্গীদের ফাঁসি। সারাবিশ্বের অগণিত মানুষকে কাঁদিয়ে সাইয়েদ কুতুব পৌঁছে গেলেন তার পরম প্রিয় প্রভুর সান্নিধ্যে। পেছনে রেখে গেলেন এক বিরাট সাহিত্য সম্ভার। তার বিশেষ বিশেষ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে একাধিক উপন্যাস ও বেশ কয়েকটি শিশু সাহিত্যসহ তেফলে মিনাল কারিয়া, মদীনাতুল মাশহুর, মাশাহেদুল কেয়ামাহ ফিল কোরআন, মা'রেফাতুল ইসলাম ওয়ার রেসমালিয়াহসহ প্রায় বিশখানা গ্রন্থ। তাফসির ফি জিলালিল কোরআন- সাইয়েদ কুতুবের এক অনবদ্য অবদান। আট খন্ডে সমাপ্ত এক জ্ঞানের সাগর। তার এসব গ্রন্থাবলী ইসলামী আন্দোলনের কর্মী ও নেতাদের জন্য পথনির্দেশিকা ও অনুপ্রেরণার অনন্ত উৎস হয়ে থাকবে। 

Sunday, 12 April 2015

পহেলা বৈশাখ পালন হারাম

প্রকৃত পক্ষে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান হচ্ছে হিন্দু, মুশরিক, মজুসী ও বৌদ্ধদের।
এতে তারা পান্তা খায়, গান-বাজনা করে, র্যা লী করে, জীব-জানোয়ারের মুখোশ পরে, মিছিল করে, শরীরের নানা অঙ্গ-প্রতঙ্গে উল্কি আঁকে, ডুগডুগি বাজিয়ে নেচে নেচে হৈহুল্লোড় করে, পুরুষরা ধুতি ও কোণাকাটা পাঞ্জাবী যা হিন্দুদের জাতীয় পোশাক তা পরে, মেয়েরা লাল পেড়ে সাদা শাড়িসহ হাতে রাখি বাঁধে, শাঁখা পরে, কপালে লাল টিপ ও চন্দন এবং সিথিতে সিঁদুর দেয়, বেপর্দা, বেহায়া হয়-


যা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী।

নবীজী বলেন- যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-
নশর তাদের সাথেই হবে। (আবু দাউদ, মিশকাত শরীফ)

হযরত আমর বিন শুয়াইব তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ঐ ব্যক্তি আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে বিজাতীয়দের সাথে সাদৃশ্য রাখে। (মিশকাত)

আল্লাহ তায়ালা বলেন-
"অতএব, তারা যেসবের উপাসনা করে তুমি সে ব্যাপারে কোনরূপ ধোঁকায় পড়বে না।তাদের পূর্ববর্তী বাপ-দাদারা যেমন পূজা উপাসনা করত, এরাও তেমন করছে। আর নিশ্চয় আমি তাদেরকে আযাবের ভাগ কিছু মাত্রও কম না করেই পুরোপুরি দান করবো। [হুদঃ ১০৯]"

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন-
"যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে এমন বস্তুর পূজাকরে, যে কেয়ামত পর্যন্তও তার ডাকে সাড়া দেবে না, তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? তারা তো তাদের পুজাসম্পর্কেও বেখবর। [আল  হ্ক্বাফঃ ৫]"

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন-
"হে ঈমানদারগণ! এ মদ, জুয়া, মূর্তি পূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শরসমূহ এ সমস্তই হচ্ছে ঘৃণ্য শয়তানী কার্যকলাপ। এগুলো থেকে দূরে থাকো, আশা করা যায় তোমরা সফলতা লাভ করবে। [সুরা মায়েদা: ৯০]"

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন-
হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত আছে- প্রিয় নবী (সা:) বলেন, বিচারের দিন ঐ সকল লোক সর্বাপেক্ষা কঠোর শাস্তিভোগ করবে, যারা আল্লাহর সৃষ্টির অনুসরণে জীবজন্তুর প্রতিকৃতি অঙ্কন বা নির্মাণ করে। (সহীহ বুখারী)

অন্য এক হাদীসে হযরত আবু তালহা (রা:) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা:) বলেন, যে গৃহে কুকুর অথবা কোনো প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না। (বুখারী, খ.২/পৃ. ৮৮০)

পহেলা বৈশাখ বা অন্য কোনো উপলক্ষ্যে ছেলেমেয়েদেরকে বেপর্দা ও বেহায়পনার সুযোগ দিবেন না। তাদেরকে বুঝান ও নিয়ন্ত্রণ করুন। আপনি মসজিদে নামায আদায় করছেন আর আপনার ছেলেমেয়ে পহেলা বৈশাখের নামে বেহায়াভাবে মিছিল বা উৎসব করে বেড়াচ্ছে। আপনার ছেলেমেয়ের পাপের জন্য আপনার আমলনামায় গোনাহ জমা হচ্ছে। শুধু তাই নয়। অন্য পাপ আর অশ্লীলতার পার্থক্য হলো, যে ব্যক্তি তার স্ত্রী-সন্তানদের বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার সুযোগ দেয় তাকে ‘‘দাইউস’’ বলা হয় এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারংবার বলেছেন যে,
»ثلاثة قد حرم الله عليهم الجنة مدمن الخمر والعاق والديوث الذي يقر في أهله الخبث«
তিন ব্যক্তি আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাত হারাম করেছেন, মাদকাসক্ত, পিতা-মাতার অবাধ্য এবং দাইউস, যে তার পরিবারের মধ্যে ব্যভিচারকে প্রশ্রয় দেয়(মুসনাদে আহমাদ: ২/৬৯)

নিজেকে এবং নিজের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করার পাশাপাশি মুমিনের দায়িত্ব হলো সমাজের মানুষদেরকে সাধ্যমত ন্যায়ের পথে ও অন্যায়ের বর্জনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। কাজেই পহেলা বৈশাখ ও অন্য যে কোনো উপলক্ষ্যে ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশা ও বেহায়াপনার ক্ষতি, অন্যায় ও পাপের বিষয়ে সবাইকে সাধ্যমত সচেতন করুন। যদি আপনি তা করেন তবে কেউ আপনার কথা শুনুক অথবা না শুনুক আপনি আল্লাহর কাছে অফুরন্ত সাওয়াব লাভ করবেন। আর যদি আপনি তা না করেন তবে এ পাপের গযব আপনাকেও স্পর্শ করবে। কুরআন ও হাদীসে বিষয়টি বারংবার বলা হয়েছে।

ব্যবসায়িক, প্রশাসনিক, রাজনৈতিক বা সামাজিক কোনো স্বার্থে অনেক মুসলিম পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশা ও বেহায়াপনার পথ খুলে দেওয়ার জন্য মিছিল, মেলা ইত্যাদির পক্ষে অবস্থান নেন। আপনার দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য এরচেয়ে ভয়ঙ্কর আর কিছুই হতে পারে না।

আসুন আমরা সবাই পাপ থেকে বাঁচার চেষ্টা করি এবং অন্যকে খারাপ পথ থেকে ফিরাই-
আল্লাহ বলেছেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَأَهۡلِيكُمۡ نَارٗا وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلۡحِجَارَةُ عَلَيۡهَا مَلَٰٓئِكَةٌ غِلَاظٞ شِدَادٞ لَّا يَعۡصُونَ ٱللَّهَ مَآ أَمَرَهُمۡ وَيَفۡعَلُونَ مَا يُؤۡمَرُونَ ٦ ﴾ [التحريم: ٦]
‘‘তোমরা নিজেরা জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা কর এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা কর। যার ইন্দন হবে মানুষ ও পাথর; যার উপর নিয়োজিত রয়েছেন কঠোর হৃদয় সম্পন্ন ফিরিশতাগণ, তারা আল্লাহ যা নির্দেশ করেন তা বাস্তবায়নে অবাধ্য হোন না, আর তাদের যা নির্দেশ প্রদান করা হয়, তা-ই তামিল করে’’[সূরা আত-তাহরীম: ৬]

আল্লাহ আমাকে সহ সবাইকে বুঝার এবং মেনে চলার তৌফিক দান করুক।

........Imrul Kaesh

Sunday, 5 April 2015

হিজাব এবং আমরা

হিজাব এবং ফ্রি মিক্সিং- এ দুটো একসাথে চলতে পারে না বোন !
আল্লাহ তাআলা বলেন: 
“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে ।”(সূরা আন-নূর:৩০)

আল্লাহ তাআলা পরের আয়াতে বলেন: 
"“ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও ""। (সূরা আন-নূর:৩১)

এখানে সবাই লক্ষ্য করতে পারেন উক্ত আয়াতদ্বয়ে নারী-পুরুষ উভয়েরই লজ্জাস্থান হেফাযতের কথা বলা হয়েছে । আর যে পোষাক তাদের লজ্জাস্থান পুরোপুরি হেফাজত করতে পারে তাকেই বলা হয় শালীন পোষাক , ইসলাম তাই বলে।
এখন কথা হল লজ্জাস্থান কতটুকুকে বোঝানো হয়েছে । এই ব্যাপারটাতেই আমরা ভুল করি । ধরে ফেলি উভয়ের জন্য একই এই ব্যাপারটা । তা নয়।
ছেলেদের জন্য সতর হল নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত । আর মেয়েদের জন্য মুখ(সমস্ত মুখমন্ডল নয়,চোখ এবং তার উপর-নীচের কিছু অংশ), হাতের কবজি এবং পায়ের তালু ব্যতীত সমস্ত শরীর । যে পোষাক তাদের এই অংশ ঢেকে রাখে তাই হল শালীন-পোষাক ইসলামের দৃষ্টিতে ।
শরীয়ত প্রবর্তিত হিজাব সেটি, যাতে আটটি শর্ত পাওয়া যায় :
প্রথম শর্ত : নারীর সমগ্র শরীরই জিলবাব বা বোরকা দিয়ে ঢাকা থাকতে হবে। জিলবাব হলো সমগ্র শরীর ঢেকে রাখে এমন পোশাক।

দ্বিতীয় শর্ত : পর্দার উদ্দেশ্যে-পরা পোশাকটাই খোদ সৌন্দর্য না হতে হবে। অর্থাৎ এমন রঙ চড়ানো বা কারুকার্যখচিত না হতে হবে যা পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি আকৃষ্ট করে। হিজাব তো সেটিই যা পরপুরুষ থেকে নারীর সৌন্দর্যকে আড়াল করে রাখে।

তৃতীয় শর্ত : হিজাব এমন মোটা কাপড়ের হতে হবে যা ভেদ করে ভেতরের সৌন্দর্য প্রস্ফূটিত হবে না।
আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবীজী বলেছেন : "দুই প্রকারের জাহান্নামী আমি এখনো দেখিনি। একপ্রকার হলো, ওই সম্প্রদায় যাদের হাতে গরুর লেজ সদৃশ চাবুক থাকবে। তারা এসব চাবুক দ্বারা (অন্যায়ভাবে) লোকদেরকে প্রহার করতে থাকবে। আর আরেক প্রকার সেসব নারী যারা কাপড় পরিধান করার পরেও উলঙ্গ থাকবে। তারা (পুরুষদেরকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও (পুরুষদের দিকে) আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে সম্মুখে ঝুঁকে পড়া উটের কুঁজের ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না; এমনকি তারা জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের ঘ্রাণ অনেক অনেক দূর থেকেও পাওয়া যাবে’ (মুসলিম)।
ইবনে আবদুল বার রহ. বলেন, এ হাদীসে সেসব মহিলার কথা বলা হয়েছে যারা এমন পাতলা ও সূক্ষ্ম পোশাক পরিধান করে যা তাদের দৈহিক সৌন্দর্য ঢাকতে সক্ষম নয়। ফলে দৃশ্যত তাদেরকে কাপড় পরিধান করেছে বলে মনে হলেও বাস্তবে তারা উলঙ্গই থাকে।

চতুর্থ শর্ত : নারীর হিজাব ঢিলেঢালা ও প্রশস্ত হতে হবে। এমন সঙ্কীর্ণ হলে চলবে না, যা নারীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ফুটিয়ে তোলে। কেননা হিজাব পরিধান করার উদ্দেশ্য ফেতনার আশঙ্কা দূর করা। আর এটা অর্জন হয় না যদি ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করা না হয়। সঙ্কীর্ণ পোশাক, তা যদিও শরীরের চামড়ার রঙ ঢেকে রাখে, তবে তা শরীরের ভাঁজগুলো প্রকাশ করে দেয়।

উসামা ইবনে যায়েদ রাযি. বলেন, আবু উসামা রাযি. বলেছেন : ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে একটি ঘন পাতলা কাতান পোশাক পরালেন, যা দাহিয়াতুল কালবী রাযি. তাঁকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। অতঃপর আমি তা আমার স্ত্রীকে পরিয়ে দিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : ‘কী হলো, তুমি যে কাতান পরিধান করলে না? আমি বললাম : হে আল্লাহর রাসূল! আমি তা আমার স্ত্রীকে পরিয়ে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন : "তাকে তুমি এর নিচে একটি আন্তর পোশাক (সেমিস) পরিধান করতে বলবে। কেননা আমি আশঙ্কা করছি যে তার হাড়ের আকৃতি প্রকাশিত হয়ে যাবে’ (মুসনাদে আহমদ। আলবানী রহ. জিলবাবুল মারআতিল মুসলিমা কিতাবে হাদীসটিকে হাসান বলেছেন)।

পঞ্চম শর্ত : হিজাবের ওপর আতর বা সেন্ট ব্যবহার করা যাবে না। এ মর্মে বহু বিশুদ্ধ হাদীস রয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ : ‘যে নারী সুগন্ধি ব্যবহার করে লোকদের পাশ দিয়ে গেল এ উদ্দেশ্যে যে তারা তার সুগন্ধি পাক, তবে সে যিনাকারী-ব্যভিচারী’ (আলবানী:সহীহ আততারগীব)।
আবু হুরায়রা রাযি. বলেন, ‘এক নারী সুগন্ধি ছড়িয়ে তার কাছ দিয়ে অতিক্রম করল। তিনি বললেন : ‘হে আল্লাহর বান্দী! তুমি কি মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছ? সে বলল, ‘হ্যাঁ’। তিনি বললেন, ‘এর জন্যই কি সুগন্ধি মাখিয়েছ? সে বলল, ‘হ্যাঁ’। তিনি বললেন, ‘তাহলে তুমি ফিরে যাও এবং গোসল করে নাও। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি :‘ যদি কোনো নারী সুগন্ধি ছড়িয়ে ছড়িয়ে মসজিদের দিকে বের হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তাআলা তার নামায কবুল করবেন না, যদি না সে বাড়ি ফিরে এসে গোসল করে নেয়’ (আলবানী : সহীহু ইবনে খুযাইমাহ)।

ষষ্ট শর্ত : নারীর পোশাক পুরুষের পোশাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে না। আবু হুরাইয়া রাযি. বলেন : "রাসূলুল্লাহ সাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওই পুরুষের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন, যে নারীর পোশাক পরে। আর ওই নারীর প্রতি অভিসম্পাত করেছেন যে পুরুষের পোশাক পরিধান করে’ ( আহমদ ও আবূ দাউদ)।
অতঃপর পুরুষ যে ধরনের চাদর, লুঙ্গি, অথাব জামা-কাপড় পরিধান করে নারীও সে ধরনের জামা-কাপড় পরিধান করবে তা ইসলামে অনুমোদিত নয়। কেননা এরূপ করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অভিসম্পাতের আওতাভুক্ত হতে হবে।

সপ্তম শর্ত : মুসলিম নারীর পোশাক কাফির নারীর পোশাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে না। কেননা শরীয়তের বিধান অনুযায়ী মুসলমান নারী ও পুরুষের জন্য কাফিরদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা বৈধ নয়। হোক তা তাদের ইবাদত-বন্দেগীর ক্ষেত্রে অথবা ঈদ-পর্ব, পোশাক-আশাক ইত্যাদির ক্ষেত্রে। হাদীসে এসেছে : مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ ‘যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করল সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হলো’ (আবূ দাউদ)। তাই পাশ্চাত্যের শোরুমগুলোতে কাফিরদের পরিধেয় যেসব পোশাক প্রদর্শিত হয় তা মুসলিম নারীদের জন্য ব্যবহার করা কখনো উচিত নয়।

অষ্টম শর্ত : খ্যাতি ও সুনামের পোশাক না হতে হবে। অর্থাৎ এমন পোশাক যা অন্যদের কাছে অপরিচিত এবং যার দ্বারা মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধি অর্জনই মূখ্য হয়ে থাকে। ইবনে উমর রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘ যে ব্যক্তি দুনিয়াতে প্রসিদ্ধির পোশাক পরবে, আল্লাহ তাআলা তাকে কিয়ামতের দিন লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন, অতঃপর তাতে আগুন ধরিয়ে দিবেন’ (আহমদ ও আবূ দাউদ)।
ছেলেরা হয়তো বুঝতে পারছেন অনেকের প্রিয় পোষাক টাইট জিন্স পরিধান করা ইসলাম মোটেও সমর্থন করে না ।