লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস : কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ
বাতজনিত কারণেই কোমরে ব্যথা বেশি হয়ে থাকে। বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন ধরনের বাতব্যথা দেখা দেয়। তবে বয়স বাড়লে সাধারণত লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস নামক বাতজাতীয় রোগের জন্য কোমরে ব্যথা হয়ে থাকে। এখানে বার্ধক্যজনিত কোমরে ব্যথা নিয়ে আলোচনা করব।
মেরুদণ্ডের নিচের হাড়ের মধ্যবর্তী তরুণাস্থি বা ডিস্কের বার্ধক্যজনিত পরিবর্তনের ফলেই এ রোগের সূত্রপাত। তরুণাস্থির এই পরিবর্তনের সাথে সাথে মেরুদণ্ডের নিচের দিকে সংবেদনশীল পরিবর্তন সাধিত হয়। সাধারণত এ পরিবর্তন ৩০ বছর বয়স থেকে শুরু হয় এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে তা বাড়তে থাকে।
রোগের উপসর্গ
* কোমরে ব্যথা। প্রথম দিকে এ ব্যথা কম থাকে এবং ক্রমান্বয়ে তা বাড়তে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চিত হয়ে শুয়ে থাকলে এ ব্যথা কিছুটা কমে আসে।
* কোমরে সামান্য নাড়াচাড়া হলেই এ ব্যথা বেড়ে যায়।
* অনেক সময় ব্যথা পায়ের দিকে নামতে পারে এবং অবশ অবশ ভাব বা ঝিনঝিন অনুভূতিও হতে পারে। এ অবস্থাকে সায়াটিকা নামে অভিহিত করা হয়।
* কোমরের মাংসপেশি কামড়ানো ও শক্ত ভাব হয়ে যাওয়াÑ এ ধরনের উপসর্গও দেখা দিতে পারে।
* প্রাত্যহিক কাজ, যেমন তোলা পানিতে গোসল করা, হাঁটাহাঁটি করা, সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠা, নিচু হয়ে কোনো কাজ করা ইত্যাদি করলে কোমরের ব্যথা বেড়ে যায়।
এ রোগের চিকিৎসা
এ রোগী শক্ত ও সমান বিছানায় বিশ্রামে থাকবেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের বিশ্রামে ব্যথা উপশম হয়। গবেষণালব্ধ ফলাফলে দেখা গেছে যে, সাধারণ কোমরের ব্যথা তিন থেকে সাত দিন বিশ্রাম নিয়ে ভালো হয়ে যায়। বিশ্রামে না কমলে চিকিৎসা করাতে হবে। ব্যথা উপশমকারী ওষুধ এবং মাংসপেশি শিথিলকরণ ওষুধ স্বল্পমেয়াদে নেয়া যেতে পারে। তবে ব্যথা উপশমকারী ওষুধের পাশাপাশি রেনিটিডিন ও ওমিপ্রাজল ব্যবহার করা ভালো, তাতে রোগীর গ্যাসট্রিকের কোনো সমস্যা হয় না।
ফিজিক্যাল থেরাপি
ক) থার্মোথেরাপি : বিভিন্ন প্রকার তাপ এ রোগে চিকিৎসকগণ প্রয়োগ করে থাকেন; যেমন ডিট হিট বা সুপারফিসিয়াল হিট। রোগীর কোন অবস্থায় কোন ধরনের থেরাপি প্রয়োগ করতে হবে তা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ নির্ধারণ করে দেন।
খ) লাম্বার ট্রাকশন : লাম্বার ট্রাকশনে সাধারণত ২৫-৫০ পাউন্ড ওজন দেয়া হয়। তবে রোগীর অবস্থা, ওজন, বয়স ও পুরুষ-মহিলা ভেদে ওজন কম-বেশি হয়। লাম্বার ট্রাকশন বিশেষ সতর্কতার সাথে চিকিৎসকের (ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ) পরামর্শ অনুযায়ী দেয়া উচিত।
গ) লোকাল স্পাইনাল সাপোর্ট : এ রোগে লোকাল স্পাইনাল সাপোর্ট হিসেবে কোমরের বেল্ট বা করসেট ব্যবহার করা যায়। তবে করসেট শুধু চলাফেরা ও কাজের সময় ব্যবহার করা উচিত।
ঘ) ইলেকট্রোথেরাপি : ইলেকট্রোথেরাপি হিসেবে ট্রান্সকিউটেনাস ইলেকট্রিকাল নার্ভ স্টিমুলেশন কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে রোগীর অবস্থাভেদে চিকিৎসকগণ এসব চিকিৎসা প্রয়োগের উপদেশ দিয়ে থাকেন।
ঙ) থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ : কোমরের ব্যথায় বিভিন্ন প্রকার থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ দেয়া হয়ে থাকে। ব্যায়াম রোগীর মাংসপেশিকে সবল করে এবং বেশি চাপ সহ্য করার ক্ষমতা তৈরি করে।
কোমরের বাতজনিত ব্যথার রোগীর জন্য কিছু পরামর্শ
* চেয়ারে বসার সময় ঘাড় ও পিঠ সোজা রেখে বসবেন।
* সব সময় শক্ত (একটি পাতলা তোশক) সমান বিছানায় ঘুমাবেন।
* কাজ করার সময় করসেট ব্যবহার করুন।
* কোনো জিনিস তোলার সময় সোজা হয়ে বসে তুলবেন।
* ফোমের বিছানায় ঘুমাবেন না এবং ফোমের (নরম সোফা) সোফায় অনেকক্ষণ বসবেন না।
* একই স্থানে বেশি সময় দাঁড়িয়ে অথবা বসে থাকবেন না।
* ঝুঁকে বা মেরুদণ্ড বাঁকা করে কোনো কাজ করবেন না।
* ভারী কোনো জিনিস, যেমন বেশি ওজনের থলি, পানিভর্তি বালতি ইত্যাদি বহন করবেন না।
* পিঁড়িতে বসে কোনো কাজ, যেমন মাছ কাটা, শাকসবজি কাটা ইত্যাদি করবেন না।
* টিউবওয়েল চেপে পানি ওঠাবেন না।
* ঝরনায় অথবা সোজা হয়ে বসে তোলা পানি দিয়ে গোসল করবেন।
* চেয়ার-টেবিলে বসে ভাত খাবেন।
* সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় মেরুদণ্ড সোজা রেখে ধীরে ধীরে উঠবেন ও নামবেন।
* হাইহিল জুতা ব্যবহার পরিহার করুন।
* মোটা ব্যক্তিরা শরীরের ওজন কমাবেন।
* যানবাহনে চড়ার সময় সামনের আসনে বসবেন।
* বিছানা থেকে ওঠার সময় যেকোনো এক দিকে কাত হয়ে উঠবেন।
* কোনো প্রকার মালিশ করবেন না।
বেশি পুরনো হলে যেমন কোনো যন্ত্র প্রায় কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, তেমনি মানুষের বয়স বাড়লেও সে অনেকাংশে তার আগের কর্মক্ষমতাকে ধরে রাখতে পারে না। তবে সুস্থ অবস্থায় এ নিয়মগুলো মেনে চললে কোমর ব্যথায় সহজে মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে না, বরং কর্মক্ষমতাও অনেক ক্ষেত্রে অটুট থাকে। তাই সুস্থ সবারই উচিত এগুলো মেনে চলা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা।
নিচের ছবিগুলো কে ফলো করলেই অনেকটা সুস্থ থাকতে পারেন-
No comments:
Post a Comment